এম.শাহজাহান চৌধুরী শাহীন, কক্সবাজার ॥
পিত্তথলির পাথর অপারেশন করতে গিয়ে ভুলচিকিৎসায় এক গৃহবধুর (রোগীনীর) মৃত্যু হয়েছে। রোগী মরণাপন্ন অবস্থায় গেলেই তাকে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নেওয়া হয়। সেখানে সারাক্ষণ চিকিৎসক, নার্স, ওষুধ, অক্সিজেনসহ রোগীকে বাঁচানোর দরকারি সবকিছুই করেও বুধবার রাত ৯টার দিকে আইসিইউতে মারা যান এই গৃহবধু। বুধবার সকালে ডাঃ আরিফ হোসেনের তত্বাবধানে এই রোগীনির অপারেশন করান তার জনৈক সহকারী (কমপাউন্ডার)। এ অভিযোগ গৃহবধু পরিবারের।
এনিয়ে পুরো জেলা সদর হাসপাতাল অভ্যন্তরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আনেন।
তবে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রথমে ঘটনাটি স্বীকার করলেও রাত ১১টার দিকে মৃত্যুর ঘটনাটি অস্বীকার করে দাবী করেন গৃহবধু আইসিইউতে নিবিড় পরিচর্যায় রাখা হয়েছে।
জানা গেছে, কক্সবাজার শহরের টেকপাড়া এলাকার বাসিন্দা ও সদর থানায় সোর্স কাজে নিয়োজিত মোজাহের আহম্মদের স্ত্রী আমেনা বেগম (৫০) এর পিত্তথলির পাথর অপারেশনের জন্য গত ১০ দিন আগে সুস্থ অবস্থায় জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ডাক্তার আরিফ হোসেনের তত্বাবধানে চিকিৎসা চলে। বুধবার সকাল ১১টার দিকে তার পিত্তথলির অপারেশন করা হয়। অপারেশনের পরেই রোগীনি আমেনার অবস্থা সংটাপন্ন হলে তাকে জেলা সদর হাসপাতাল থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন। কিন্তু চমেক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আর্থিক সামর্থ না থাকায় জেলা সদর হাসপাতাল বেড়েই রাখা হয়। বুধবার রাত ৯টার দিকে সেখানে তার মৃত্যু ঘটে।
এদিকে, ঘটনা ধামাচাপা দিতে কৌশলে তার মৃতদেহ নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়। বুধবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে নিরিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে থাকা অবস্থায় তার মৃত্যু ঘটেছে বলে নিহতের আত্মীয় স্বজনদের জানান।
নিহত আমেনা বেগমের স্বামী মোজাহের আহম্মদ ও স্বজনদের সুত্রে জানা গেছে, ডাক্তার আরিফ হোসেনের তত্বাবধানে চিকিৎসা পরবর্তী অপারেশন সম্পন্ন করা কথা থাকলেও তিনি তা না করেই তার সহকারীকে দিয়ে অপারেশন করান। রোগী মরণাপন্ন অবস্থায় গেলেই তাকে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নেওয়া হয়। ভুল অপারেশনে তার মৃত্যু হয়েছে দাবী তাদের। তারা আরো জানান, ঘটনার ব্যাপারে কোন বাড়াবাড়ি না করার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ৫০ হাজার টাকা নিয়ে আপোষরফা করার জন্য চাপ সৃষ্টি করেন বলেও অভিযোগ।
বুধবার রাত ১১টা পর্যন্ত নিহত আমেনার মৃত দেহ আইসিইউতেই রেখে দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ও সিভিল সার্জন ডাঃ পুচনু রাত ১০ টায় রোগীর মৃত্যুর ঘটনাটি স্বীকার করে বলেন, এধরনের ঘটনা খুব কমই ঘটে। তবে আমেনার মৃত্যুর ঘটনাটি অপ্রত্যাশিত। একটি মহল এই স্বাভাবিক ঘটনাটিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করছে এবং রোগীনির পরিবারের সদস্যদের উস্কানি দিয়ে ফায়দা হাসিলের প্রচেষ্টা করছে বলেও তিনি দাবী করেন।
সিভিল সার্জন ডাঃ পুচনু রাত ১১টার দিকে সাংবাদিকদের জানান, রোগী আমেনা বেগম জীবিত রয়েছে।
কক্সবাজার সদর থানার এসআই আল আমিন এর নের্তৃত্বে একদল পুলিশ রাত সাড়ে ১১টার দিকে গৃহবধু আমেনার মৃত দেহ উদ্ধারের জন্য আইসিইউতে অবস্থান নিতে দেখা গেছে।
পাঠকের মতামত: